Wednesday 14 September 2016

    কেমন হত যদি ধরুন আপনার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো হত? ক্লাস সেভেনের হাফ ইয়ার্লির আগের দিন রাত ১২ টায় আপনি ঠিক কি করছিলেন বলতে পারবেন? পারবেন না তো? কি বললেন-এমন আবার হয় নাকি? অবাক হবেন না হয়। এমন হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ৪১ বছর বয়সী প্রশাসনিক সহকারি “AJ”,হ্যাঁ চিকিৎসাশাস্ত্র ওনাকে এই নামেই চেনে, ১১ বছর বয়সের পর থেকে সব স্মৃতি মনে করতে পারেন। অপরদিকে ৮৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ল্যাব টেকনিশিয়ান “EP” সাম্প্রতিক কিছু স্মৃতি ছাড়া কিছুই মনে রাখতে পারেন না।আপাত দৃষ্টিতে “AJ” কে বেশ সৌভাগ্যবতী মনে হলেও আমি কিন্তু “EP” কেই বেশি খুশি মানুষ বলবো। আবর্জনা স্মৃতিতে জমিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। তাছাড়াও কিছু জিনিস মনে করতে চাইছি মনে করতে পারছি না কিছুতেই এর মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ আছে। কখনও কখনও মনে পড়েও না। কাঁচুমাঁচু মুখ করে বসে ভাবি কিছুক্ষণ। কিন্তু তারজন্য কোনো আফসোস নেই,তবে পরীক্ষার হলে আবার “AJ” অনেক বেশি খুশি হত। “আমার স্মৃতি চলচ্চিত্রের মত ভেসে চলে”-একবার একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন “AJ”। ১৯৮৬ সালের ৩ অগাস্ট দুপুর ১২;৩৪ মিনিটে তাকে তার পছন্দের মানুষটি ফোন করেছিলেন তিনি এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারেন। তবে “AJ” ছাড়াও বেশ কিছু মানুষ রয়েছেন। যেমন ৫৬ বছর বয়সী কিম পিক,যাকে নিয়ে “রেইন ম্যান” চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল,তাঁর নাকি প্রায় ১২,০০০ বই মুখস্থ। “এস” একজন রাশিয়ান সাংবাদিক,যার উপর রাশিয়ান নিউরোসাইকোলজিস্ট আলেক্সান্ডার লরিয়া প্রায় তিন দশক গবেষণা করে দেখেছেন তিনি একবা শুনেই অসম্ভব বড় শব্দ,সংখ্যা বা কোনো অর্থহীন সিলেবল মনে রাখতে পারেন, তবে কিনা “এ জে” সত্যিই বেশ আলাদা,একটু বেশিই ইউনিক। এবং “এ জে” এতটাই অভূতপূর্ব যে তার আত্মজীবনীর অফুরন্ততথ্যসম্ভার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার স্নায়ুবিজ্ঞানী জেমস,এলিজাবেথ এবং ল্যারিকে ,ওদিকে Irvine যিনি “এ জে” কে প্রায় সাত বছর ধরে স্টাডি করছেন,তাকেও বেশ বেকায়দায় ফেলে এবং “এ জে” এর এই অবস্থাকে ব্যখ্যা করার জন্য একটা নতুন নামকরণ করেনঃহাইপারথাইমেস্টিক সিন্ড্রোম।

           এত গেলো “এ জে” র কথা। এবার আসি রেবেকা শ্যারকের প্রসঙ্গে। তিনিও পৃথিবীর সেই ৮০ জন বিরল মানুষের একজন যাদের “হাইলি সুপিরিয়র অটোবায়োগ্রাফিক্যাল মেমরি” কন্ডিশনের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়। অর্থাৎ তিনি জীবনের প্রায় সব মুহুর্ত মনে রেখেছেন। রেবেকা একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি নাকি দেড় বছর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন,এবং তখন আজ অব্ধি তার সব স্বপ্ন মনে আছে। শুনতে আজগুবি লাগলেও ব্যাপারটা সত্যি। হ্যারি পটার ভক্ত রেবেকে জানিয়েছিলেন তিনি হ্যারি পটারের বইগুলির প্রত্যেকটা শব্ধ হুবহু বলতে পারবেন মুখস্থ। মনে পড়ছে বিবেকানন্দ বেলুড়ে নিজের ঘরে শুয়ে আছেন, এমনস্ময় তার শিষ্য শরচ্চন্দ্র ঘরে এসে দেখলেন স্বামীজি এন্সাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পড়ছেন। তাই দেখে অবাক হয়ে তিনি বললেন,এই বই কারোর পক্ষে একজিবনে শেষ করা সম্ভবই না,তাই শুনে স্বামীজি ঘরে রাখা এন্সাইক্লোইডিয়ার বাকি খন্ডগুলোর দিকে দেখিয়ে বললেন,কি বলচিস,আমি যে এর কয়েকটা এর মধ্যেই শেষ করে ফেলেচি। প্রশ্ন করে দেখ। শরচ্চন্দ্র প্রশ্ন করে দেখেছিলেন স্বামীজি সত্যি সত্যি মুখস্থ বলছেন,এমনকি কখনও কখনো পাতার নম্বরও বলে দিচ্ছেন। ব্যাপারটা ছোটবেলায় বেশ আজগুবিই মনে হত এখন মনে হচ্ছে এমন হয়ত হতেও পারে। তবে কি অলৌকিক কিছুই নয়,সবই বিজ্ঞান।

           
      

                                        রেবেকা শ্যারক


      পুনশ্চঃ লেখাটি লিখতে গুগল,ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন বড্ড সাহায্য করেছে।