Monday 20 June 2016

আশুতোষ কলেজ আমার কাছে একটা অদ্ভুত মায়াবী প্রেমিকা। চমকালেন? চমকানোর মতই কথা বটে। ওই একটা কলেজ যেটা মুখে মুখে শুধু পার্টি পলিটিক্সের জন্য বিখ্যাত। অ্যাকাডেমিক সাফল্য আছে কিন্তু পার্টি পলিটিক্স সেই সাফল্যকে টুঁটি টিপে খুন করেছে‚ভদ্র ভাষায় পলিটিক্স ডমিন্যান্ট। কিন্তু সে যাই হোক তাতে আমি থোড়াই কেয়ার করি। কোন পার্টি ইউনিয়ন চালায় তা জেনে আমার কি? ইউনিয়ন চালানো একটা বড় কাজ মানছি কিন্তু সেই ইউনিয়ন যতক্ষণ না হার্মফুল কিছু করছে ততক্ষণ তার বিরুদ্ধে কথা বলবো কেন? না শুধু আমার নিজের ক্ষেত্রে হার্মফুল হবে এমন কথাই বলছি না‚মাস পিউপিল এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য একথাটা! প্রসঙ্গত কলেজে কান পাতলে ইউনিয়নের বদনাম এবং সুনাম দুটোই সমান শোনা যাবে হয়ত। একটু এদিক ওদিক হতে পারে। কলেজে ঢুকে আজ অব্ধি কোনো বিরাট ঝামেলা পোহাতে হয়নি আমায়। তাই অনেক বেশি করে আশুতোষ কলেজকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার্। অবশ্য আমার অ্যাটেন্ডেন্সের খাতায় অনুপস্থিতির হার চোখে পড়ার মত। আমি অমনোযোগী স্টুডেন্ট হিসেবে পরিচিত। ডি গ্লুকোজের অক্সিডেশন পড়তে গিয়ে আমার রাজনৈতিক থিওরি মাথায় আসে। যেমন ধরা যাক ডি গ্লুকোজের সাথে নাইট্রিক অ্যাসিড  দেওয়া হল। ডি গ্লুকোজের অ্যালডিহাইড গ্রুপ এবং OH গ্রুপ কার্বক্সিল গ্রুপে পরিণত হবে। এবার রাজনীতি মেশানোর পালা। ধরে নিলাম CHO গ্রুপ হল বিজেপি আর CH2OH গ্রুপ হল তৃণমূল। এবার নাইট্রিক অ্যাসিড হল প্রতিবাদী রিএজেন্ট। এরা কি করলো? এরা দুটো গ্রুপকেই কার্বক্সিল গ্রুপে পরিণত করলো। অর্থাত্‍ এরা তৃণমূল আর বিজেপি কে একই গ্রুপে বানিয়ে দিল। এই রিএকশনের মধ্যে এবার সজ্ঞানে জেএনইউ ইনক্লুড করা হল। জেএনইউ কান্ডে এই দুই দলের অবস্থানই এক। একই গ্রুপ এই ক্ষেত্রে এরা। বায়োকেমিষ্ট্রির ম্যাম এই পোষ্টটা দেখলে হয়ত আমায় ক্লাসের বাইরেই বের করে দেবেন। আমি বাইরে থেকে পড়া শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। বাইরে থেকে পড়া শোনার অভ্যেস আমার ছোটোবেলার্। ক্লাসের বাইরে থেকে ক্লাসকে দেখতে আমার মোটামুটি খারাপও লাগে না। হয়ত অ্যাডাপশন।

তো এই হল মোটামুটি আমার অন্যমস্কতার পরিচয়। আশুতোষে নতুন বিল্ডিংটায় আমাদের ক্লাস হয়। অ্যানেক্স বিল্ডিং। অ্যানেক্সের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা থার্ড ইয়ারের দিদির দিকে তাকাইনি বলাটা উচিত হবে না। লাল রকে দিব্যি আড্ডা মেরেছি। কখনও কখনও ক্লাসের অনেক আগেই কলেজ চলে গেলে কলেজকে ঘুম থেকে উঠতেও দেখেছি গতকালের ফেলে যাওয়া ইভিএস নোটের পাতা। বা অজস্র ফিল্টার্। এই সমস্ত স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে জেগে উঠছে কলেজ। আশুতোষ কলেজ। 
মা আর বান্ধবী এ দুজনের অভিমান হল সেই ভোরবেলার শীত শীত করা অবস্থার মত‚রবীন্দ্রনাথ "গোরা" এ যেমন বলেছেন‚চাদরটা পায়ের সামনেই পড়ে আছে।কিন্তু উঠে টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল আলস্য। অথচ এড়িয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর্। এও ঠিক তেমনই। কাল বেশ রাতে বান্ধবীর সারাদিনের সমস্ত জমিয়ে রাখা মনখারাপ আমাকে সবিস্তারে জানানোর সময় প্রবল কান্নাকাটির মাধ্যমে জানায় যে তার বাইক এবং ফোর হুইলার দুটোই শেখার ভীষণ ইচ্ছে। ভালো কথা। কিন্তু তার বাবা এবং দাদাই কিছুতেই দেবে না। কারন গাড়ি চালালে ও যে ধাক্কা দেবেই এব্যাপারে ওরা দুজনেই  সিওর্। যদিও আমার বান্ধবীর যুক্তি আসলে মেয়ে বলে গাড়ি শেখাতে আপত্তি। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসছি। মনে মনে প্রমাদ গুনছি। আমি জানি এক্ষুণি তাকে বাইক শিখিয়ে দেওয়ার আব্দার আসবে। এবং সেই আব্দার এলেন তবে এই যুক্তি নিয়ে সেই আব্দার খানা হাজির হলেন যেন আমি যদি বাইক চালানো না শেখাই তাহলে আমিও মধ্যযুগীয় বর্বরতার একখানা নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেতে পারি। বেশ। আমার যাবতীয় গাঁইগুঁই‚বাবার লজঝড়ে বাইকটার প্রতি অমোঘ ভালোবাসা এবং সর্বোপরি একজন মানুষের প্রাণ না যাক নিদেনপক্ষে হাত পা ভাঙার সমস্ত যুক্তি ফুত্‍কারে উড়িয়ে দিয়ে সদর্পে সে জানান দিল যে ডেট টা বল কবে শেখাচ্ছিস। আমি নিরুত্তর্। ওদিক থেকে অনর্গল মিসাইল ছুটে আসছে. হ্যানা ত্যানা। আমি বললাম। কত অমিল তোর আর আমার্। আমি বই ভালোবাসি। তুই বাইক। আমি চোখ ভালোবাসি তুই আকাশ। বান্ধবী বেশ কিছুক্ষণ চুপ।তারপর বলল সম্পর্কে কোনটা জরুরি বলে তোর মনে হয় শখের মিল? স্বীকার করলাম ঝগড়ার মজা অন্যরকম। তারপর যা হয় বায়নার অজস্র নদী পেরিয়ে একসময় মোহনায় এসে দাঁড়ালাম। হঠাত্‍ বলল তোর সিনেমার চয়েস আমি জানি। আমি অবাক হয়ে বললাম বেশ‚কেমন সে চয়েস? শান্ত গলায় বলল ভালো। আমি ওকে বললাম অনেক ছোটবেলায় একটি দিদি আমায় একবার বলেছিল আমার সিনেমার পছন্দ নাকি একটা ভাঙা জানলার পাশে রেখে দেওয়া দিশাহীনপালকের মত‚যেকোনোদিন যেকোনো দিকেই উড়ে যাতে পারি। এসব শুনে ফোনের ওপাশে একটা আসন্ন হিংসা এবং অপার অভিমান ফিরে এলো। ততক্ষণে আমার ঘরের মেঝেয় জ্যোত্‍স্না এসে পড়েছে। দুজনেই চুপ। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বলল আমি অত উপমা দিতে পারছি না এখন। আমি বললাম চাইনি তো উপমা। উপমা আসলে চিনামটির কাপপ্লেট সাজিয়ে রাখলেই আমার বেশি ভালো লাগে। আমার কাঁচের চায়ের গ্লাসই ভালো। ধুয়ে মেজে আপন করে নেওয়া যায়। আসন্ন তর্ক এবং ঝগড়ার সমস্ত সম্ভাবনাকে বিশ্বাসে মিলিয়ে দিয়ে যে যার মত ফোন কেটে অভিমানের ঝুলিতে আরও কয়েকগুচ্ছ অভিমান ভরে শুতে গেলাম।