Friday 27 January 2017

মৃত্য সম্পর্কে একান্ত ব্যক্তিগত প্রেডিকশনসমূহ

অ্যান ওভারভিউ

আমাদের মৃত্যু মিছিলে সুলোচনা,কলকাতায় যদিবা জমে ওঠে ভিড়
ক্ল্যাসিক্যালে সূর্য্য ভাঙবে চাঁদের সংসার-
ডিনার টেবল ও তৎসহ এঁটো বাসনের পৃষ্ঠদেশে জমে ওঠে স্তব্ধতা,
নির্দেশহীনভাবে ঘুরে বেরানো দললছুট পিঁপড়ে এবং
আমাদের মৃত কামনারা অলিন্দ থেকে অলিন্দে দৌড়ে বেরাবে অহেতুক
ব্যস্ততায়।
বিছানার পর বিছনায়-বালিশে-গন্ধে-ঘামে,নীলকামড়ের
শীতল উরুদ্বয়,কুহকোজ্জল মিডিয়ায়-
আমাদের ডিজিটাল দূরত্ব বাড়বে পিক্সেলে,বাইটে,টিআরপিতে।
মৃত্যু মিছিলের দিন হ্যান্ডবিল বিলি করা হবে সোৎসাহে।
লেখা থাকবে-‘জীবন-মরণের জারি মহাযুদ্ধে ও কমরেড।
দ্যাখা হবে ফের ময়দানে’এবং ‘শেষে স্টার দিয়ে-না কেঁদে ওপরে দেখুন
হাই বলছি।
কুয়াশার কালিম্পং-এ বাঁক নিলেই এক ঝাঁক পরী দ্যাখা যায়,
হেসে ওঠে অচঞ্চল মিঠি কম্পনে।‘আমাদের মৃত্যু হোক ওরকম উত্তেজনায়’।
মনে পড়ে প্রায় চল্লিশ বছর আগে এক মেঘাবৃত নোটবুকে
এক “ফ্যান্টাসিময় কবি”-র লেখা লাইন-‘উৎপাটনও একটি কার্য-
এবার অনিচ্ছাকৃত আলেয়াটিকে গুরুত্ব দেওয়া হোক,কারন আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর পরে প্রকাশ্য কার্যহীনতার উন্মত্ত নৃত্যবিনোদন আমাদের কাছে অসহ্য ঠেকবে।অবশ্য অপশন দু’টোই-‘নিলে নাও,না নিলে মিস’।

আ থট অ্যাবাউট ‘মোমেন্ট অব ক্লাউড’

উফ্‌,ওই রাস্তাটা বাঁ’দিকে,ওটাই মন্দারমনির দিকে যাচ্ছে,আমরা তবু দীঘা যাবো।
মধ্যবিত্ত ভ্রমনের তৃপ্তি ভিন্ন এবং স্বস্তিদায়ক। আসলে আমি বা ধরো আমাদের
জেনারেশনটা পার্টিকুলার্লি এক মোহনা-মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী্‌আমাদের কমবেশী
সবার একটা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে উচ্চ মধ্যবিত্ততে উত্তীর্ণ হওয়ার
এক গোপন কাহিনি আছে।তবুও বদলের যন্ত্রনাবোধের কথা –‘আজকালকার
জোর করে মনে রাখানোর’ তীব্র সংক্রমণের ফলশ্রুতি আমরা প্রতিরাতে
রোমাঞ্চিত হই।
-‘চেঞ্জ ইন দ্য টাইম অফ ব্লিঙ্ক’
‘যেকোনো দরজাই আমার কাছে অচেনা হয়ে যায়
যেকোনো শাড়ির পারে সিঁদুরের দাগ-
যেকোনো বালিশ কোনো সাক্ষ্য দেবেনা
যেকোনো শরীরে ঢোকে তিনকোণা প্লাগ’।

-In the Time of cloud and whisper
In the time of dispatch and desire
In the time of broken sword of the self
I don’t know,I don’t know….

That way along the fear of wings,
On the mountain of Kalimpong-
And the snake climbing up the road
I walked with joy and sorrow.

-উড়ো ভাবনার মত কেউ বলে উঠবে-
‘উও ভি কেয়া দিন থে,চঢ়াইয়ো মে জন্নত হোতা থা’

-‘পাহাড়বিষয়ক প্রবন্ধ’ তৎক্ষণাৎ বন্ধ রেখে উঠে

গ্যালো তরুন,সুলোচনা,আমাদের সময় এসেছে।  

Monday 23 January 2017

এই লেখাটির নাম ‘ঝরা পাতা’ দিলে বেটার হত

আমি তো দু’জন ক্যান্সার পেশেন্টের কথাই বলতে চেয়েছিলাম,ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের এক কোনে দু’টো বেডে শুয়ে থাকে যারা অন্ধ শ্রমিকের মত।
অনেক রক্ত পচাগলা দেহের ওপর সাদা চাদর পাতা দু’টো বেড,বাস্তবিকই পরিচ্ছন্নতা দেখার মতন।
হ্যাঁ এখানেও একটা বেশ ফুরফুরে দুপুর নামে,নাইন্টিজে বলিউডে যেরকম দুপুর দেখাতো সেরকম ব্যাস্ত নয়,তবে রোদ্দুরটা ওরকমই লাগে। হিসেবমত জীবন তো একটা সিনেমাই। আবার সিনেমাও তো একটা জীবন। বাচ্চারা মুখে সবুজ রঙের মাস্ক পরে বোবা এঞ্জেলের মত ছুটে ছুটে যাচ্ছে ফুলের কাছে,ফুল কিন্তু ডিস্ক্রিমিনেশন করছে না,কারন ফুল ক্যান্সারের বুকের ওপর ফুটে ওঠার ধক রাখে।
“বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস”-তা ক্যান্সারও বন্দুকের নলই,জীবনের দিকে তাক করা আছে,আদালতে দরজা খুলে গেলে ট্রিগার টিপে দেবে।
যখন আমার পিসতুতো ভাইকে দেখতে প্রথম গেছিলাম,তখন বায়োলজিতে সদ্য বিনাইন আর ম্যালিগন্যান্ট এর মত টার্ম পড়েছি।রীতিমত রক্তগরম,যাওয়ার পথে আমি তা জাহিরও করেছিলাম যদ্দুর মনে পড়ে।
সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো জানলাগুলো,ওরা নিজের মত,ওরা যেন জানে না এ ঘরে জ্যোৎস্না নয়,প্রতিরাত্রে মৃত্যু ঢুকে পড়ে।টলমলে শরীর থেকে খুবলে খুবলে তুলে নেয় চোখ,নাক,গলার অ্যাডামস অ্যাপ্‌ল...। আর তারপর থেকে যায় ওই সাদা চাদর,যা প্রতিটা মৃত্যুর পর চাদর সেজে এসে শুয়ে পড়ে।এরকমই কোনো এক বিছানায় কবি  সুকান্ত হয়তবা প্রতিদিন লন্ড্রি থেকে ফিরে আসছে যক্ষার রক্ত ধুয়ে ফেলে।

এ গল্পে কেউই সুকান্ত হয়ে ওঠেনি,এরা নিতান্তই “আট নম্বর কাল মারা গ্যাছে”-র বাক্যেই সীমাবদ্ধ।তবু এদেরও একটা পরিচয় গড়ে ওঠে,অচেনা কোনো সুন্দরী বাস থেকে নেমে যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালে যেমন হয়,তেমনটা।ভাইকে দেখতে গিয়ে আলাপও হয়েছিলো,এখন মনে পড়ে না।সাড়ে চারটের দুপুরে বাচ্চাগুলো সবুজ বাগানে আস্তে আস্তে হাঁপিয়ে উঠছিলো।
শিশিরের সাথে পিয়ালীর দ্যাখা যেদিন হয়েছিলো সেদিন শিশির পিয়ালীর অ্যাপিয়ারেন্সে সবার আগে যেটা লক্ষ করেছিলো তা হল গ্রীবা,দীর্ঘ গ্রীবা।চোয়ালের নীচ থেকে যেন একটা গোপন ঝরনা নেমে এসেছে।অথচ মজার ব্যাপার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই জানতে পারল যে পিয়ালীর গলাতেই থাবা বসিয়েছে কর্কট।এবং ট্রান্সফার হতে হয় অন্য ডিপার্টমেন্টে। শিশির তারপর থেকে প্রতিদিন বিকেলের ওষুধের টাইমের আগে বাগানে আতিপাতি খুঁজেছে পিয়ালীকে,শেষমশ দেখতে পেলো ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের মেইন বিল্ডিংটার ঠিক সামনে একটা যত্নের আতিশয্যে কিছুটা হেজে ওঠা পুলের সামনে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো জলের দিকে। ঠিক এরপরই শিশির এগিয়ে যেতে গিয়ে আস্তে আস্তে প্রায় মিলিয়ে গেছিলো পেভমেন্টে। আর জেগে উঠেছিলো পিয়ালীর থেকে মাত্র তিনহাত দূরে,এইবুঝি তার দ্বিতীয়বার জেগে ওঠা।এবার আফসোস হল এই যে তার ঠোঁটে ক্যান্সার হলে সে বুঝি বেঁচে যেত। গল্পে সমতা বজায় থাকত।কিন্তু আমি একটা চালাকি করেছি যাতে এটা গল্প না হয়ে ওঠে ক্যাটাগরিক্যালি তা আটকানোর জন্য, কলমটাকে দু’আঙুলের মাঝে ঢুকিয়ে বলেছি-যাও তো একটু ঘুরে এসো,সে নিজের মত ঘুরতে গ্যাছে,নিজের মত ঘুরছে,থুড়ি,লিখছে। নাহলে আমিও তো একটা টিটোয়েন্টি মহাকাব্য লিখতে চাই।

সেদিন বেডে ফিরে শিশির মনে মনে ভেবেছিলো-ধুর শালা,ক্যান্সার দিলি তো দিলি রক্তে দিলি না,মধ্যবিত্তর মহাব্বতে হলের ভিতরেই শুরু,হলের ভিতরেই শেষ।পরেরদিন নার্স এসে বলে যে এবারের মত তার ট্রিটমেন্ট শেষ,আজ তার ছুটি হবে।
সিনেমা হলে ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা রক মিউজিক দেওয়া যেত,কিন্তু জীবন আক্ষরিকই কম্পোজিশনের সময় দেয় না।বিল্ডিং থেকে বেরোবার সময় সেই পুকুরটার সামনে দাঁড়িয়ে পিয়ালী একটা অবান্তর কথা বলেছিল। বলেছিলো
-‘আমার নাম পিয়ালী,আপনার নামটা জানতে চাই না, কিন্তু আপনার সাথে আর যেন দ্যাখা না হয়’।       

Friday 20 January 2017

এপিক-চার-১
রজার এবার্ট মজা করে বলেছেন কুরোসাওয়ার “সেভেন সামুরাই” পরের অন্তত পঞ্চাশ বছরের জন্য অ্যাকশন হিরোদের কাজ জুগিয়েছে।একথার সরাসরি বিরোধিতায় যাবোনা,এবং তা মোটেই ধৃষ্টতাজনিত কারনে নয়।১৯৫৬ সালে তৈরি “সেভেন সামুরাই(শিচিনিন নো সামুরাই)” আমাকে,আজ এই যুগেও রোমাঞ্চিত করে লিবারাল আঙ্গিকের জন্য,লার্জার দ্যান লাইফ একটা চরিত্র ‘কিকুচিও’(তোশিরো মিফুনে)র জন্য আর গল্প বলার সাবলীলতার অদ্ভুত নিজস্ব স্টাইলে।আধভাঙা সিঁড়ির মত আমরা আগুনের সামনে থমকাবো এই সন্ধ্যেয়।অনেকে ‘ইকিরু’র কথা বলেন,আমি সত্যি কথা বলতে তা দেখিনি। তবে হ্যাঁ আমিও স্বীকার করি ‘রশোমন’ কুরোসাওয়ার উৎকৃষ্ট কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা।‘সেভেন সামুরাই’ আমাদের ষোড়শ শতকের জাপানী সামুরাই সংস্কৃতি,গ্রাম্য অ্যাম্বিয়েন্স,আর “ভয়” এই কয়েকটা জিনিস ডিফাইন করে। এখানে “ভয়” শব্দটা হিচককীয় অর্থে অবশ্যই ব্যবহৃত নয়,বরং অন দ্য কনট্রারি,একেবারের কুরোসাওয়াইয়ান “ভয়”,যার মধ্যে পরস্পরবিরোধী সত্বার হোমিসাইড পুরে দেওয়া থাকে।একদল লুটপাটকারীর ভয়ে প্রায় ন্যুব্জপ্রায় এক গ্রাম নিজেদের রক্ষার্থে ছয়জন সামুরাই ভাড়া করে,এর মধ্যে কিছুটা স্বেচ্ছায় যোগ দেয় কিকুচিও।এখানে কিকুচিওর অ্যাপিয়ারেন্স লক্ষ্যনীয়। সবার থেকে বড় একটা তলোয়ার কোমরে নিয়ে বা কখনও তলোয়ারটাকে কাঁধে নিয়ে(রাইফেল ভঙ্গিতে) দাঁড়ানোর যে ভঙ্গিমা তা হাস্যকৌতুকের,কিন্তু এই কিকুচিওর চরিত্রটিই ডিরেক্টরসাহেব সম্ভবত হ্যামার করার জন্যই তৈরি করেছিলেন।কিকুচিও পূর্বে একজন কৃষক ছিলেন,পরে সামুরাই হন।কিন্তু কৃষক প্রজাতির একটা সম্পূর্ণ বিপরীত দিক উনি উন্মোচন করেন গল্পের অর্ধভাগের আগেই,যা অন্তত এই ফিল্মটির পরিপ্রেক্ষিতে ওই স্থানে শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয় চমকপ্রদও। কুরোসাওয়া এক ঝটকায় শ্রেণীচেতনাকে জাগিয়ে তুলছেন এবং চোখে আঙুল দিয়ে বলছেন না গরীব মাত্রেই মহান এমন হয় না,তারাও মানুষ। প্রায় ঘাড় ধরে চরিত্রগুলোকে বাস্তবের মাটিতে টেনে আনা হচ্ছে।‘একজন লেখকের গল্প যখন বাস্তবতার সাথে আমাদের ঘুলিয়ে দেয় তাকে মহান বলে আখ্যা দেওয়া যায়’-কেউ একজন বলেছিলেন,আমি বলি সবসময় যে গল্পকে বাস্তব হতে এমন কোনো রুলবুক অবশ্যই নেই,বরং ফ্যান্টাসির জাল বিস্তার করতেই পারে।কিন্তু বাস্তবতার সাথে ডিল করে বানানো এই ফিল্ম কোনো অংশে ভাওতাব্জি মনে হয় না।একদম ক্যাটাগরাইজেশনের ভিত্তিতে এটি কতটা যুদ্ধের সিনেমা আর কতটা সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটির তা বোঝা যায় না।  
ওপেনিং সিন 



রিকিচি
এপিক কি ক্যানোর কোনো স্পেসিফিক উত্তর হয় না।এই ছবিটি যখন শুরু হচ্ছে আমরা দেখতে পাই কিছু লোক ঘোড়ায় চড়ে আসছে বা যাচ্ছে নির্দিষ্ট এক স্থানের দিকে।কিছুক্ষণ পর তারা একটা পাহাড়ের ওপর থেকে একটা গ্রামের দিকে তাকায়,এবং খুবই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সর্দার গোছের একজন বলেন যে এবার নয়,আগে বার্লিগুলো পেকে উঠুক তারপর আমরা আসবো। এই কথোপকথন গ্রামের একজন শুনে ফ্যালেন এবং তা গ্রামে গিয়ে অবিলম্বে জানান।দুটো মজার ব্যাপারের কথা বলি। প্রথমত,সন্দীপনের গদ্যে যেমন স্থান ইটসেলফ একটা চরিত্ররূপে অবস্থান করে তেমন এখানে পাহাড়ি গ্রামটি নিজেও এক চরিত্র,যার নিস্তব্ধতা,বৃষ্টির দিনের প্যাচপ্যাচে সন্ধ্যে বা ফুল ফুটে থাকা লুকোনো বাগান সবই যেন একটা মনুষ্য চরিত্রের বিভিন্ন মুড বা বিভিন্ন অনুভূতি।দ্বিতীয়ত আব্বাস কিয়েরোস্তামি ক্লোজ আপ শটে ঠিক যে ‘সাইলেন্স’-টা ক্রিয়েট করেন কুরোসাওয়া সেই ক্লোজ আপে আগুন এঁকেছেন। গ্রামের মানুষ ডাকাতের খবর পেয়ে এক জায়গায় জড়ো হন সমাধানের জন্য। কেউ বলেন চলো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাই? ডাকাত চলে যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আসেন, তাও খুব কম সময়ই হয়ত তাকে পাওয়া যায়, “He’s useless” এই যুক্তিতে এই প্রস্তাব খারিজ হয়। এরপর এক মা উঠে দাঁড়ান এবং বলেন সমস্ত ফসল,বার্লি ওদের দিয়ে দি বরং এবং নিজের গলায় দড়ি দিই,তাহলেই ম্যাজিস্ট্রেট দৌড়ে চলে আসবেন,তার মুখে অসহায়তা। লক্ষ্যণীয় দুটি বাচ্চা তাদের মা কে ধরে রেখেছে।অর্থাৎ একথা আসলে সচেতন কোনো সত্বাই বলতে পারে না,সাময়িক বিস্ফোরনের ফলে উৎসারিত এই কথা বলার সময় বিবেক তাকে বাধা দিচ্ছে,বাচ্চাদুটির আটকে রাখা তারই পোর্ট্রায়াল। বলেছিলাম আধভাঙা সিঁড়ির মত আমরা থমকাবো মাঝে মাঝেই। এই বৈঠক কি আমাদের জিবি নয়? এই অসহায় গ্রাম্য মানুষ কি আমরা নই? আমরাই তো। আমাদের সমস্যা নিয়ে আমরা কাদের কাছে যাবো এর সমাধান সম্ভবত আমরা এখনও পাইনি,কেউ এখনও রিকিচির মত উঠে দাঁড়িয়ে বলছে না-“We’ll kill them all”। খুব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় রিকিচির ঠোঁট কাঁপছে,রাগে। ক্যামেরার ওপাশে প্রতিভাত এই রাগ আমাদেরও নয় কি? এই ফেটে পড়া আমাদেরও নয় কি?এখানেও যেমন সবাই-“Crazy Talk” বলে দমিয়ে দিচ্ছেন এই বিদ্রোহকে তারাও তো এ যুগে আছেন।লেলিহান শিখাকে হাত ধরে নীচের দিকে নামিয়ে আনার সংস্কৃতি তো আমাদের সমাজেও বিরল নয়।  

কথোপকথন এবং শট বিশ্লেষন
ক্যামেরা একজন মুখের,যে কিছু কথা বলছে, তার ক্লোজ আপে শুরু হওয়ার পর,কথার মাঝখানেই ঘরের বিভিন্ন জিনিস দ্যাখা যায় স্ক্রিনে,তারপর ক্যামেরা স্থির হয় ওপর একজনের মুখে,যে কথোপকথনের শ্রোতা।এই ইমপ্লিমেন্টেশনটা আমার বিশেষ পছন্দের।যা কুরোসাওয়ার “রশোমন”,”সেভেন সামুরাই” দুটো ছবিতেই প্রতিভাত হয়েছে।
(ক্রমশ)

Wednesday 18 January 2017

সুপারিম্পোজড যা কিছু

সুপারিম্পোজড যা কিছু


আলোলিকা আমাদের যা কিছু শারীরিক সবই বিছানার ব্যাকগ্রাউন্ডে আগুনের খেলা।বিছানার এককোনে টাঙানো ধর্ষিত চাঁদ,হেসে উঠেছে খিলখিল।থ্যাঁতলানো প্যারোটিডঘন দুটো চোখ,যার ভেতর দিয়ে মানুষ নয় রক্তাক্ত পরিসর ভেসে ওঠে।তিনকাপ কফির অর্ডার ছিল একমাত্র তোমার কফির রঙ ছিল অ্যাকোয়া সেদিন।পোষ মানা রিমোটের বোতামের ফাঁকে একটা মাইক্রোমনষ্ক সংসার,ধরে নাও ব্যাকটেরিয়ার।কার্তিয়ের ব্রেসোঁ বলেছেন-‘তোমার প্রথম একহাজার ফোটোগ্রাফ ফেলে দাও,এবার তুমি দক্ষতা লাভ করেছো।’অথচ প্রথম একহাজার ছবির মধ্যে আমাদের সিমলা যাওয়ার ছবি,আমি কীভাবে বড় হলাম ও অন্যান্য,মায়ের গানের শিক্ষক,বাবার ফুটবল খেলায় পাওয়া স্টিলের থালা হাতে হাসি-এসবই লুকিয়ে রাখা আছে,আমি ফেলে দিতে পারবো না আলোলিকা,আজ তুমি দক্ষতা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।‘ওদিকে যেও না’,-মহাবিশ্ব থেকে ‘সময়’ আমাদের সম্ভবত এরকমই কিছু বলে মুখ ঘুরিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে গেছিলো।আমরা সত্যি কথা বলতে এখন আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছি।কি সাহস জানো? তোমার নামের পাশ থেকে পদবী তুলি নিয়ে নিজের পদবী বসাতে গিয়ে দেখি উরুদ্বয় বিছিয়ে শুয়ে আছে মিথিলিন স্বাধীনতা।একদিন মনে পড়ে তোমার ত্বকরন্ধ্রে গীটার বেজ উঠেছিলো আর তুমি ইউএসবি পাওনি বলে যা কিছু বক্তব্য তা ঊর্মিল পসিবিলিটির দিকে ছুঁড়ে দিয়েছো আর আমার দিকে ফিরে বলেছো-বলেছিলাম আমার কথা বাতাস বইতে পারে না।সাড়ে তিনমিনিট তাকিয়ে থাকলে দাবানল হয় একথা তুমি জন্মে শুনেছো?কি করবে বলো আমাদের এমনকি যৌনতাতেও ফ্লেভার লাগে।বরং গলা ফাটিয়ে,রগ টিপে ধরে চিৎকার করে বলি-আজ আমাদের স্বপ্নের নাম রুস্তম,রাগ মল্লার।চিন্তা কোরো না আমদের গ্র্যাচুইটি পাড়ায় অধিবেশন বসেনা এখন।যেইমাত্র আমাদের গলি শেষ হয় আমরা ঢুকে পড়ি আরো একটা ইটার্নাল বাইলেনে। নোংরা পাতলুনের সংসারে ছুঁচওলা এক দিদিমা থাকেন,যার গায়ের রঙ ধূসর,পান্ডুলিপি কুঁচকে গ্যাছে,এখন আর কবিতা লেখেনা কেউ।বস্তির হাইড্রেন থেকে উঠে আসে তাক করে রাখা ক্যামেরা স্নাইপারস্তব্ধতায়।দুপুরের নিষ্ক্রান্ত প্রহরে অপরাজিত সৈনিকের মত আমার আধপোড়া মা,অপার আঁচল,বিভীষিকা আলোলিকা,গলা আর কলারবোনের মধ্যে একটা গভীর গর্ত,তাতে ডিসচার্জ করা চাপ চাপ রক্ত,সম্ভবত আমার বাবার।কি বলতো বাবা আর আমার মাঝে রাখা হয়েছে এক নির্বোধ দাঁড়িপাল্লা,টিকটিক সহযোগে তা ক্রমশ আমার দিকে হেলে পড়ছে,আর বাটখারা বাবার বুকে চেপে বসছে কুমিরের মত।এখন রাতের দিকে আমাদের সংসারের নাম রাখি-‘প্যাথোলজি ল্যাব’।

                                            ১৮.০১.১৭