Monday 20 June 2016

মা আর বান্ধবী এ দুজনের অভিমান হল সেই ভোরবেলার শীত শীত করা অবস্থার মত‚রবীন্দ্রনাথ "গোরা" এ যেমন বলেছেন‚চাদরটা পায়ের সামনেই পড়ে আছে।কিন্তু উঠে টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল আলস্য। অথচ এড়িয়ে যাওয়া অস্বস্তিকর্। এও ঠিক তেমনই। কাল বেশ রাতে বান্ধবীর সারাদিনের সমস্ত জমিয়ে রাখা মনখারাপ আমাকে সবিস্তারে জানানোর সময় প্রবল কান্নাকাটির মাধ্যমে জানায় যে তার বাইক এবং ফোর হুইলার দুটোই শেখার ভীষণ ইচ্ছে। ভালো কথা। কিন্তু তার বাবা এবং দাদাই কিছুতেই দেবে না। কারন গাড়ি চালালে ও যে ধাক্কা দেবেই এব্যাপারে ওরা দুজনেই  সিওর্। যদিও আমার বান্ধবীর যুক্তি আসলে মেয়ে বলে গাড়ি শেখাতে আপত্তি। আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসছি। মনে মনে প্রমাদ গুনছি। আমি জানি এক্ষুণি তাকে বাইক শিখিয়ে দেওয়ার আব্দার আসবে। এবং সেই আব্দার এলেন তবে এই যুক্তি নিয়ে সেই আব্দার খানা হাজির হলেন যেন আমি যদি বাইক চালানো না শেখাই তাহলে আমিও মধ্যযুগীয় বর্বরতার একখানা নিদর্শন হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেতে পারি। বেশ। আমার যাবতীয় গাঁইগুঁই‚বাবার লজঝড়ে বাইকটার প্রতি অমোঘ ভালোবাসা এবং সর্বোপরি একজন মানুষের প্রাণ না যাক নিদেনপক্ষে হাত পা ভাঙার সমস্ত যুক্তি ফুত্‍কারে উড়িয়ে দিয়ে সদর্পে সে জানান দিল যে ডেট টা বল কবে শেখাচ্ছিস। আমি নিরুত্তর্। ওদিক থেকে অনর্গল মিসাইল ছুটে আসছে. হ্যানা ত্যানা। আমি বললাম। কত অমিল তোর আর আমার্। আমি বই ভালোবাসি। তুই বাইক। আমি চোখ ভালোবাসি তুই আকাশ। বান্ধবী বেশ কিছুক্ষণ চুপ।তারপর বলল সম্পর্কে কোনটা জরুরি বলে তোর মনে হয় শখের মিল? স্বীকার করলাম ঝগড়ার মজা অন্যরকম। তারপর যা হয় বায়নার অজস্র নদী পেরিয়ে একসময় মোহনায় এসে দাঁড়ালাম। হঠাত্‍ বলল তোর সিনেমার চয়েস আমি জানি। আমি অবাক হয়ে বললাম বেশ‚কেমন সে চয়েস? শান্ত গলায় বলল ভালো। আমি ওকে বললাম অনেক ছোটবেলায় একটি দিদি আমায় একবার বলেছিল আমার সিনেমার পছন্দ নাকি একটা ভাঙা জানলার পাশে রেখে দেওয়া দিশাহীনপালকের মত‚যেকোনোদিন যেকোনো দিকেই উড়ে যাতে পারি। এসব শুনে ফোনের ওপাশে একটা আসন্ন হিংসা এবং অপার অভিমান ফিরে এলো। ততক্ষণে আমার ঘরের মেঝেয় জ্যোত্‍স্না এসে পড়েছে। দুজনেই চুপ। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বলল আমি অত উপমা দিতে পারছি না এখন। আমি বললাম চাইনি তো উপমা। উপমা আসলে চিনামটির কাপপ্লেট সাজিয়ে রাখলেই আমার বেশি ভালো লাগে। আমার কাঁচের চায়ের গ্লাসই ভালো। ধুয়ে মেজে আপন করে নেওয়া যায়। আসন্ন তর্ক এবং ঝগড়ার সমস্ত সম্ভাবনাকে বিশ্বাসে মিলিয়ে দিয়ে যে যার মত ফোন কেটে অভিমানের ঝুলিতে আরও কয়েকগুচ্ছ অভিমান ভরে শুতে গেলাম।

No comments:

Post a Comment