Wednesday 1 July 2020

পিথাগোরাসের উপপাদ্য




পিথাগোরাসের উপপাদ্য 



পিথাগোরাসের উপপাদ্যটা মনে আছে? সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘের বর্গ বাকিদুটো বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গের যোগফলের সমান। ব্যালকনি থেকে শহরের মেঘলা রাতে যেটুকু ফুরিয়ে আসা টুপ্টাপ শোনা যায় সেটুকু শুনতে শুনতে আট নম্বর পেগের গ্লাসটা নামিয়ে অনুরাগ  বলল পিথাগোরাস আসলে সম্পর্কের থিওরেম দিয়ে গ্যাছেন। কেমন করে?  ধরে নি অতিভুজ বাদে বাকি দুটো বাহু আসলে দুটো মানুষ। আর অতিভুজ সম্পর্ক। একটা মানুষের ভালো খারাপ দুটোই থাকে তাই বর্গ। তর্ক এবং পেগের খাতিরে ধরে নি ভালো ও খারাপের পরিমাণ সমান। এখন মুশকিল হল আমরা খারাপটুকু বাদ দিয়ে শুধু ভালো টুকু নিয়ে ডিল করতে গিয়েই অতিভুজে হোঁচট খেয়ে যাই,কি বল?

তাহলে অতিভুজের বর্গটা কি? অতিভুজ কেন বর্গ হয়?

গুড,ভেরি গুড কোয়েশ্চেন- আসলে সম্পর্কের সৃষ্টিই হয় দুটো অব্জেক্টের ইন্টারঅ্যাকশনের ফলে। তাতে দুটো অব্জেক্টের মিলিত অনুভূতি থাকে,তো অ্যাপারেন্টলি একটা এনটিটি হওয়ার কথা তাই না? কিন্তু তা হয় না। কেন হয় না? কারন সম্পর্ক সিঙ্গেল এনটিটি না। দুটো (নন-ইনঅ্যানিমেট) অব্জেক্টের অনুভূতি ইন্ডিপেন্ডেন্টলি মুভ করে।ল অব সেগ্রিগেশন পড়েছিলি তো? মেন্ডেলের? 
সে তো কোন ছোটোবেলায়
হ্যাঁ,ওখানেও একটা বিবরণ...এই কি হল...বমি পাচ্ছে?

আবাহন কে বমি করিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসল অনুরাগ। মেঘা আর একটা সোফায় ঝিমুচ্ছে। অনুরাগ মনে মনে ভাবছে গাঁজাখুড়ি গল্পের লেভেলটা বেশি হয়ে যাচ্ছে। বেশ লজ্জা লজ্জা লাগল তার। খুব বেশি কারোর সাথে সে এখন আর আড্ডা মারে না। এক আধদিন শুধু আবাহন আর মেঘা আসে,ব্যাস। পাশ ফিরে অনুরাগ দেখল আবাহন ঘুমিয়ে পড়েছে,মেঘা তন্দ্রাহত। ব্যালকনিতে ফিরে এলো সে। পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কের এই আজগুবি যুক্তিটা আসলে অনুরাগের নিজের আইডিয়া না। এটা তাকে শুনিয়েছিল একটা দিদি,কয়েক বছর আগে। একটা পিকনিকে। ব্যান্ডেলের একটা বাগানে তারা গেছিলো সেবার। ল্যাবের অ্যানুয়াল পিকনিক। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর মজলিস মত হয়েছিল,বেশিক্ষণ জমেনি সেটা। আস্তে আস্তে এদিক ওদিক অনেকেই ছিটকে গেছিল। তখন বাগানের একটা পুকুর পাড়ে বসে ওই দিদি,কি বেশ নামছিল,হ্যাঁ মনে পড়েছে, পারমিতা দি, এই আইডিয়াটা বলেছিল। বলাই বাহুল্য সেটা তৃতীয় জয়েন্টের পর। পিকনিক প্রায় শেষের দিকে। সন্ধ্যে নামছে নামছে। খুব মন দিয়ে সেদিন পারমিতা দি র সবকটা কথা শুনেছিল অনুরাগ। এমনকি বিশ্বাসও করেছিল হয়ত। পুকুরকে পিছনে ফেলে ঘাট থেকে উঠে আসার সময় খুব অস্ফুটে পারমিতা দি বলেছিল- আমরা সমান্তরাল ভালোবাসি অনুরাগ,রেললাইন,ওভারহেড তার... ডিসেম্বরের ঠান্ডা জমাট সন্ধ্যের ভেতর সেদিন নেশার জন্যেই হোক বা ভুল করে ,অনুরাগের পারমিতা দি র গলার স্বরটা খুব মায়াবী মনে হয়েছিল। পরের বছর পারমিতা দি বাইরে চলে গেলো পোস্টডক করতে। ফেয়ারওয়েল পার্টিতেও দারুন আড্ডা হয়েছিল। সবাই চলে যাওয়ার পর দুজনে হাঁটতেও বেরিয়েছিল ওরা। কত কত বিষয় নিয়ে বক বক করেছিল সেদিন। একটুও ক্লান্ত লাগেনি। 

আজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অনুরাগ মনে মনে ফিস ফিস করে বলল-পারমিতা দি অনুভূতি হেরে যায় বলেই ভাষার জন্ম। সবাই সবাইকে বুঝে নিতে পারেনা বলেই ভাষার জন্ম। তোমার থিওরির বাতিল অতিভুজ  দিয়েই আসলে ভাষা তৈরি। আর কিচ্ছু না। 

খুব সুন্দর একটা ভোর হচ্ছে,সাথে আবার ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি নামলো বোধহয়। 

No comments:

Post a Comment