Tuesday 9 June 2020

অর্ধবৃত্ত,বাকি অর্ধ কোয়ান্টাম



অর্ধবৃত্ত,বাকি অর্ধ কোয়ান্টাম 


বায়োকেমিস্ট্রির একটাও অ্যাসাইনমেন্ট কমপ্লিট হয়নি অনুরাগের। দুটোয় ক্লাস,তার আগে লাইব্রেরিতে বসে ফাইনাল টাচগুলো দিয়ে নেবে কিভাবে সেই প্ল্যানিংটা করতেই করতেই হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ে থেকে বেরিয়ে ইওয়ানের লাইনে দাঁড়ালো সে। চড়চড়ে রোদ মাথার ওপরে,তার সঙ্গে অফিসটাইমের অর্ধবৃত্তাকার বাসের লাইন,অনুরাগের লিনেন শার্ট পিঠে ক্রমশ চেপে বসছে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে হেডফোনটা সেট করে গান চালাতে চালাতে একটা সুগন্ধ অনুভব করলো সে। মাথ তুলে যখন দেখল তখন মেয়েটি অনেকটা পিছনে চলে গ্যাছে। ফোনের স্ক্রীনে চোখ সরিয়ে সদ্য সেট করা হার্ড রক থেকে অরিজিৎ সিং এ শিফট করে গেলো অনুরাগ। 
-দাদা,লাইন এগোচ্ছে
(অন্যমনস্কতায় স্থির হয়ে গেছিলো সে)
-(অপ্রস্তুতভাবে)...হ্যাঁ হ্যাঁ সরি;এগোলো সে। 
পনেরো মিনিটেই বাসের গেটে এসে সে টের পেলো মনের মধ্যে একটা কথাই বার বার রিপিট হচ্ছে,জানলাওয়ালা দুজনের সিটটা যেন পেয়ে যাই। বাস আধাআধি ভর্তি জানলার ধারে একটা সিট পাওয়া গেলো। কিন্তু বসার পর খেয়াল করল যে জাকির খানের প্ল্যানিং ফুলপ্রুফ,যদি মেয়েটি পাশে এসে বসে তাহলে বোনাস,নাহলে জানলার হাওয়া এই রোদ্দুরে কোনোদিন ধোকা দেয়নি আর প্লেলিস্টে গান তো রইলোই। ইচ্ছে করে ফোনে মুখটা গুঁজে রাখলো। আড়চোখে দেখলো মেয়েটি তার বন্ধুর সাথে কোণাকুণি তিনজনের সিটে বসলো। অনুরাগের সিট থেকে শুধু মেয়েটার মাথার একটু দেখা যাচ্ছে। 
-দাদা এখানে কেউ আছে?
-(আবার অপ্রস্তুতভাবে এবং অন্যমনস্কভাবে)...হুম...না না...কোথায় নামবেন আপনি?
-যাদবপুর
-এক কাজ করুন ভেতরে চলে আসুন,আমি হাজরা।
-আচ্ছা
জানলাটা ছেড়ে দিয়ে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলেও এখন মেয়েটার হাত দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর আঙ্গুলগুলো। তুঁতে রঙের সালোয়ারের ওড়নাটাও সিট থেকে খানিকটা ঝুলছে। মেয়েটি বন্ধুর সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলছে। অনুরাগ জানলার দিকে মুখ ফেরালো। বাস বড়বাজার পেরোচ্ছে,অনেক দেরি হাজরা আসতে। কানে হেডফোনটা লাগিয়ে অনুরাগ চোখ বন্ধ করলো। 

ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন পূর্ণ সিনেমা এসে গ্যাছে। হেডফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ নিয়ে ধীরে ধীরে  গেটের কাছে এলো অনুরাগ। বাসের ভেতর গরে মুখের ওপর কিছুটা ঘাম জমেছিল,এখন গেটের কাছে মুখে হাওয়া লেগে সেগুল আসতে আসতে শুকিয়ে যাচ্ছে,ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে বেশ। মেয়েটি নেমে গ্যাছে আগেই কোথাও। সেই সিটে এখন একজন অফিসযাত্রী। 
বাস থেকে নেমে অনুরাগ অনুভব করল কি কি ফাইনাল টাচ দেবে ভেবেছিল সেগুলো সব গুলিয়ে ঘ হয়ে গ্যাছে। মুখ তুলে ইওয়ানটাকে চলে যেতে দেখল সে। এই বিরাট শহরে আর কোনোদিন এই মেয়েটির সাথে দেখাই হবে না হয়ত তার,দেখা হলেও সে চিনবে না,তার মুখ সে দেখতেই পায়নি। শুধু হাতের আঙ্গুলগুলো চেনে। আর একটা সুগন্ধ। মুচকি হেসে রাস্তা পেরিয়ে কলেজে ঢুকে গেলো সে।  

No comments:

Post a Comment